অনিয়মের বেড়াজালে দুবলা শুটকি পল্লী!

মাসুম বিল্লাহঃ
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে চলছে শুটকি ভরা মৌসুম। সে ক্ষেত্রে এ মৌসুমে রাজস্ব ঘাটতির তেমন আশংকা না থাকলেও বন বিভাগের দাবী মাছ নেই সাগরে। মাছ ধরা, বাছাই, গ্রেডিং সহ প্রক্রিয়াজাত করণে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। তবে, চর গুলোতে উন্নত পরিবেশ না থাকার পাশাপাশি নানা অব্যবস্থাপনার কারনে মান সম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মতে, উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদন করা গেলে সরকারি রাজস্ব বহু গুনে বেড়ে যাবে এবং দুবলায় তৈরী শুটকি বিদেশে ও রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে, সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিতে দুবলা টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার প্রলাদ চন্দ্র রায় সাগরে মাছ নেই এমন মন্তব্য করলেও তা সঠিক নয়। চলতি বছর শুটকি পল্লীতে প্রায় ১৫ হাজার জেলের থাকার জন্য ৭৬৫টি ও মহাজনদের থাকার জন্য ৪০টি বসত ঘর রয়েছে। মৎস আহরণ কাজে ব্যবহারের জন্য প্রায় দেড় হাজার ট্রলার সহ শতাধিক নৌকার অনুমোদন দিয়েছে বনবিভাগ। এছাড়া প্রতিটি ঘর ২৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ অনুসারে তৈরীর নিয়ম থাকলেও সেখানে রয়েছে নানা অনিয়ম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, শেলার চর ও মাঝের কিল্লা সহ ৫/৬ টি চরে কয়েক যুগ ধরে চলছে দুবলা শুঁটকি পল্লী। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস চালু থাকে শুঁটকি তৈরীর এ মৌসুম। এখানে উপকুলীয় এলাকা খুলনা, সাতক্ষীরা, শরণখোলা, বাগেরহাট, মোংলা, রামপাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম,কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী সহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী এ সকল চরে শুঁটকি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, শুটকি পল্লীর জেলে, মহাজন সহ বনরক্ষীদের কয়েক জন বলেন, দুবলায় কর্মরত বন কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র রায় জেলে ও মহাজনদের নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে নানা ভাবে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি অস্থায়ী বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে সুন্দরবনের কোন বনজ সম্পদ ব্যবহারের নিয়ম না থাকলেও তা ভঙ্গ করেছেন জেলে ও তাদের মহাজনরা। জেলে পল্লীতে অবস্থানরত কয়েক হাজার জেলে তাদের দৈনন্দিন রান্না-বান্নার কাজে বনের নানা প্রজাতির গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। যার ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সুন্দরবন। সরকারী রাজস্ব ছাড়াও ব্যবসার তহবিল অনুসারে ৮/১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয় ব্যাবসায়ীদের। এছাড়া প্রতিটি ট্রলার থেকে ১৪/১৫ হাজার টাকা আদায় করলেও মাত্র ৫/৬ হাজার টাকার রশিদ ধরিয়ে দিচ্ছেন বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা। এছাড়া জেলে ও তাদের মহাজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় আদায়কৃত কোন টাকা পয়সার রশিদ দেয় না দুবলার (ওসি) প্রলাদ বাবু। তিনি দুবলার দ্বায়িত্ব নিয়েই নানা অজুহাতে সরকারী রাজস্ব কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে দুবলা টহলফাড়ীর ইনচার্জ প্রলাদ চন্দ্র রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে বলেন, আপনারা শরনখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি সব কিছুই জানেন।
পাঠকের মতামত: